সাইফুল ইসলামঃ
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নয়ন পিস্তলসহ গ্রেফতার।
নাতনীতে ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আলোচিত দুই ভাইকে মুজিবর মাস্টার ও মিজানুর রহমানকে হত্যার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ নয়ন শেখকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব-১২ সিপিসি-১, কুষ্টিয়া ক্যাম্প-এর অভিযানে রবিবার(১১সেপ্টেম্বর) রাতে রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার পলাশী গ্রাম হতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। নয়ন কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার ফকিরাবাদ গ্রামের মোঃ নজরুল শেখের পুত্র। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ০১টি বিদেশি পিস্তল এবং ০৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার নয়নকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ মুজিবর রহমান মাস্টার ও মিজানুর রহমান হত্যাকান্ডে তার সংল্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। এছাড়াও সে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ছিনতাই মামলা ও একটি ডাকাতি মামলায় তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। গ্রেফতারকৃত মোঃ নয়ন শেখ এলাকায় নয়ন বন্ড, নয়ন ডাকাত ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল। হত্যাকান্ডের পর সে প্রথমে ঢাকায় পালিয়ে যায়। তারপর কোর্টে আত্মসমর্পণ করে এ মামলায় দেড় বছর জেল খাটে। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেলেও পরবর্তীতে জামিন বাতিল হওয়ায় সে ভারতে পালিয়ে যায়। সেখানে সে এক গৃহস্থের বাড়িতে মহিষের রাখাল হিসেবে কাজ করতো। ভারতে থাকা অবস্থায় সে কুষ্টিয়া ও রাজশাহীর বালুর ইজারাদারদের নিকট হতে বিকাশের মাধ্যমে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতো। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নিজস্ব ট্রলার যোগে মাদক ব্যবসা, মারামারি ইত্যাদি কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। উক্ত হত্যাকান্ড সম্পর্কে সে জানায়, প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ছাড়াও সমন্বয় এবং পরিকল্পনার সাথে সে যুক্ত ছিল। এছাড়া তার নামে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা ও দৌলতপুর থানায় ১টি অস্ত্র মামলা, ১টি ডাকাতি, ২টি মারামারি ও ১টি ছিনতাই মামলাসহ মোট ৫টি মামলা রয়েছে যা বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন।
প্রসঙ্গত: এ মামলার বাদী জাহারুল ইসলামের ভাতিজা আশরাফুজ্জামান রতনের ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে মসজিদ হতে নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এলাকার বখাটে কিশোর মোঃ আরিফুল ইসলাম এবং তার আত্মীয়-স্বজন আসামিরা হামলা করে ঘটনাস্থলে স্কুল শিক্ষক মুজিবুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করে। একইসঙ্গে তাঁর ভাই মিজানুর রহমানকেও জখম করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিজানুর রহমানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত স্কুল শিক্ষক মুজিবুর রহমানের ছেলে জাহারুল ইসলাম বাদী হয়ে ভেড়ামারা থানায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নাম্বার- ১৭, তারিখ- ২৬/০৪/২০১৬। এ মামলায় পুলিশ ২০১৭ সালের ৯ মে কর্মকর্তা ১২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার বিচার শেষে ২০১৯ সালের ০১লা ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক উক্ত গ্রেফতারকৃত আসামি নয়ন শেখসহ ০৪ জন আসামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড ও প্রত্যেককে ৫০,০০০/- টাকা জরিমানা, ০৭ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০,০০০/- টাকা জরিমানা করে অর্থদন্ড অনাদায়ে অতিরিক্ত ০১ বছর বিনাশ্রম কারাদ- এবং ০১ জন আসামিকে ১০ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ নয়ন শেখকে গ্রেফতারের ব্যাপারে র্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করতঃ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে র্যাব জানায়।
Leave a Reply